প্রকাশিত: ১৩/০২/২০১৭ ১১:০৪ পিএম

ঢাকা: দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর এই প্রথম জনসম্মুখে এসে বক্তব্য দিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সোমবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ছিল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি।

ডিইউজের বার্ষিক সাধারণ সভায় মাহমুদুর রহমান বক্তব্য রাখবেন এমন খবরে সবার মধ্যেই ছিল অন্যরকম আগ্রহ। তাই সকাল থেকেই সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে একত্রিত হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে মিলনায়তনটি কানায় কানায় ভরে যায়। এমন কী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও এসে একত্রিত হন সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা।

বেলা ১২টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন মাহমুদুর রহমান। পরে একে একে সবাই আসন গ্রহণ করেন। বেশ কিছুক্ষণ চলে মাহমুদুর রহমানকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করার পালা। শতাধিক পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

পরে শুরু হয় বক্তব্যের পালা। সাংবাদিক নেতাদের বক্তব্যের পর মাহমুদুর রহমান বক্তব্য দিতে আসেন। এসময় কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমানের নামে মিলনায়তনজুড়ে স্লোগান উঠে।

এরপর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজনীতি, বিচার, বিভাগ ও সাংবাদিকতাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তার বক্তব্যজুড়েই ছিল সরকারের কঠোর সমালোচনা।

সেই সঙ্গে তিনি এই অবস্থা থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য কিছু দিকনির্দেশনাও দেন। তার ভাষায় এই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন না হলে কোনো নাগরিকেরই অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তাই তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। তাদের কোনো বৈধতা নেই। ফলে এমন একটি সরকারের অধীনে কোনো নাগরিক অধিকার থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে দেশবাসীকে মুক্ত হতে হলে সামনে একটা পথ খোলা আছে। আর সেটা হলো ‘গণ-বিপ্লব’। জনগণ জেগে উঠে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই এই অত্যাচারী শাসকের বিদায় হবে। এ জন্য তিনি দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।

সোমবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ইসলামের জন্য, দেশের গণতন্ত্রের জন্য ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য যে লড়াই চালিয়ে আসছি সেই লড়াই চলবেই। কোনো রকম ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে আমাদের এ লড়াই কে দামিয়ে রাখা যাবে না।

মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে আইনগত, রাজনৈতিক ও সহযোগী গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের অধিকার সুরক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। তাই দেশবাসীর একটাই মাত্র পথ খোলা আছে- সেটা হলো গণ-বিপ্লবের মাধ্যমে দেশবাসীকে দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্ত করা।

তিনি দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার কথা আরো বলেন, এ অবস্থা শুধু এখনই হয়নি, অতীতেও ৭৫ সালে দেশে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এবার সেটার গুণগত মান ভিন্ন, সেসময় আইনগতভাবে সংবাদমাধ্যম কিন্তু বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে। এটা খুবই ভয়ানক পরিস্থিতি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশবাসীকে দ্বিমুখী লড়াই করতে হবে। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তথা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, অন্যদিকে দেশীয় ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কেননা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সমর্থনেই এরা এখনো টিকে আছে। জনগণকে লড়াই করে এই দুই শক্তিরই পতন ঘটাতে হবে।

কারা নির্যাতিত এই সম্পাদক বলেন, ভয় পেলে বিজয় আসবে না। ভয়কে জয় করে এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতার জন্য জনগণকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।

এ ধরনের কোনো গণ-আন্দোলন গড়ে উঠলে সেই লড়াইয়ের অগ্রভাগে নিজেকে সম্পৃক্ত করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি এক্ষেত্রে ফরাসী বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনগণই ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফলে বাংলাদেশের জনগণকেও সেভাবে জেগে উঠতে হবে এই ফ্যাসীবাদী শাসনের বিরুদ্ধে।

এ সময় নিজেকে আবারো দেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত মানুষ উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি এ দেশেরই নাগরিক। কিন্তু এ দেশে আমার কোনো নাগরিক অধিকার নেই। আমার মতো নির্যাতিত মানুষ এ দেশে আর একজনও নেই। আমিই এ দেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত মানুষ।

তিনি বলেন, এ দেশে আমার কথা বলার অধিকার থাকবে না। এ কোনো দেশে আমরা বাস করছি। এ অবস্থা কোনো ভাবেই চলতে দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, ভয়কে জয় করে গণবিপ্লব করতে পারলেই সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। হতাশ না হয়ে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্ধকারের পর আলো উদ্ভাসিত হবেই। সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী, বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, পেশাজীবী নেতা ডা. জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক নেতা আব্দুস শহীদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বাকের হোসাইন প্রমুখ। সভাটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক নেতা শাহীন হাসনাত।

উল্লেখ্য, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর গত ২৩ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। জেল থেকে মুক্তির লাভের পর আজই প্রথম প্রকাশ্যে তিনি কোনো সমাবেশে কথা বলেন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...